সর্দি জ্বরঃ (Common Cold and Fever)
সর্দি জ্বর অনেক দেশের অত্যন্ত পরিচিত একটি রােগ। একে ঠান্ডাজনিত সাধারণ সর্দি বলা হয়। বৎসরের যে কোন ঋতুতে, প্রত্যেক লােক দুই একবার সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হয়। এক বাড়ীতে কেহ আক্রান্ত হইল, ঐ বাড়ীর আরও দুই একজন আক্রান্ত হইতে পারে। সর্দি-কাশি কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা অপেক্ষা অধিক কষ্টদায়ক। এ রােগটি সাধারণত ভাইরাসের আক্রমনে হয়ে থাকে।
যাদের দেহে রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা কম থাকে, অপুষ্টিতে ভােগা শিশু, ছােট ঘরে অনেক লােক বসবাস করলে তাদের এই রােগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। এই রােগ ঠান্ডা-গরমের হঠাৎ পরিবর্তনের সময় অর্থাৎ ঋতু পরিবর্তনের সময়
বেশি দেখা যায়। একটানা অতি বর্ষণ, স্যাতস্যাতে পরিবেশ, খুব ঠান্ডা, খুব গরম এ ধরনের অবস্থায়ও এ রােগ হতে পারে।
ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ব্যক্তিরও নাক দিয়া পানি পড়ে ও কাশি থাকে। কাজেই রােগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সর্দি-জ্বর এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে হয়। এলার্জির জন্য সর্দি জ্বর হতে পারে। সর্দিযুক্ত লােকের সংস্পর্শে থাকলে। কিম্বা, আবহাওয়ার পরিবর্তন হতেও এই রােগ হতে পারে। তবে এটি মহামারী আকারে হয় না।
সর্দি জ্বর হবার কারনঃ
- বৃষ্টির পানিতে ভিজা, গরমের পর হঠাৎ ঠান্ডা লাগা, পেট গরম হওয়া, ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি পান করা, অতিরিক্ত শ্লেস্মাকর জিনিষ খাওয়া প্রভৃতি কারণে সর্দি জ্বর হয়।
- মাঝে মাঝে নাক দিয়ে পুঁজ যুক্ত সর্দি/শ্লেষ্ম মানে জীবাণু দূষণ।
রোগনির্ণায়ক বৈশিষ্ট্যঃ Clinical Features
১) প্রথমে হঠাৎ করে নাকে জ্বালা এবং হাঁচি শুরু হয়।
২) নাক দিয়ে প্রচুর পানি ঝরে।
২) অস্বাচ্ছন্দ্য বােধ, গলায় ঘা, সামান্য গায়ে তাপ থাকে।
৪) মাথা ভার বােধ হয়।
৫) যদি Bacterial infection হয় তবে,
- ক) গায়ের তাপ বাড়ে এবং অপরিবর্তিত বা স্থায়ী থাকে।
- খ) নাক দিয়ে পুজ যুক্ত বা ঘন পুঁজের মত ছিনি পড়ে।
- গ) মাথা ব্যথা এবং সাইনাসে বা কপালে মধ্যে এবং কানে ব্যথা হয়।
- ঘ) পূর্ব হইতে লাং ডিজিজ বা ফুসফুসের রােগ অধিকতর খারাপ করিতে পারে।
- ঙ) নাক থেকে যে সর্দি বাহির হয়, সেটা হল ঘন, হলুদ। এটিতে নাকের শ্বাস নিতে কষ্ট হইতে পারে।
- চ) জটিলতা বৃদ্ধি করতে পারে অর্থাৎ সাইনােসাইটিস, মধ্যকর্ণের প্রদাহ, ফুসফুসের প্রদাহ দেখা দিতে পারে।
আনুষাঙ্গিক ব্যবস্থা গ্রহণঃ
১। যদি সর্দি জ্বরের সঙ্গে টনসিলাইটিজে আক্রান্ত হয়, তবে এটি ভিন্ন চিকিৎসা করতে হবে।
২। এ রােগীকে বিশ্রামে থাকতে হবে।
৩। ফ্রিজের ঠান্ডা জাতীয় খাবার এড়াতে হবে।
৪। গরম খাবার ও পানীয় খেতে হবে।
৫। পুষ্টিকর খাবার ও প্রচুর পানীয় গ্রহণ করতে হবে।
৬। গা ব্যথা, জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল খেতে হবে, বয়স ও ওজন অনুসারে।
৭। হাঁচি, সর্দি কমানাের জন্য এন্টিহিষ্টামিন জাতীয় ঔষধ খেতে হতে পারে, বয়স ও ওজন অনুসারে নির্দিষ্ট মাত্রায় দেয়া।
৮। খাওয়া যেতে পারে ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার যেমন লেবু, আনারস, পেয়ারা, আমলকি ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে।
৯। এই রােগ যেহেতু ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে তাই এন্টিবায়ােটিক দিলে কোন কাজ হবে না ও তবে সঠিক ব্যবস্থাপনার।
১০। অভাবে এই রােগে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমন হয়ে সাইনুসাইটিস, কানপাকা রােগ ইত্যাদি হলে এন্টিবায়ােটিক যেমনঃ এ্যামােক্সিলিন, কোট্রাইমােক্সাজোল, সেফরাডিন ইত্যাদি ব্যবহার করা লাগতে পারে।
১১। এই রােগটি ছােয়াচে হওয়ায় রােগীর সাথে অন্যান্য সুস্থ মানুষের মেলামেশা সাবধানে করতে হবে।
১২। রােগীর ব্যবহৃত তােয়ালে, গামছা, রুমাল ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না।
১৩। রােগী হাঁচি দেয়ার সময়, মুখে রুমাল দিবে।
১৪। যেখানে সেখানে কফ, থুথু বা নাকের শ্লেস্মা ফেলবে না।
প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
Note: English Version ( Click Here )
Comments 1